দেশের শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই স্টক এক্সচেঞ্জের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫০০ টাকা হওয়া উচিত নয়, তা এখন লেনদেন হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে বাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার ও দেশ।
স্টক এক্সচেঞ্জের নেতারা বলেন, সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাজারে প্রচুর বিনিয়োগকারী এসেছেন। ফলে বেড়েছে শেয়ারের চাহিদা। সেই অনুযায়ী বাড়েনি শেয়ারের সরবরাহ। আর চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে এই ভারসাম্যহীনতাই বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। অথচ সরকার বারবার ঘোষণা দিয়েও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার ছাড়তে পারেনি। এ কারণে বাজারে কোনো বিপর্যয় দেখা দিলে তার দায়দায়িত্ব সরকারের ঘাড়েই বর্তাবে। তাই শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা।
রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শনিবার প্রতিষ্ঠান দুটির নেতারা এভাবেই তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন বিনিয়োগের সঠিক সময় নয়। টাকা থাকলেই বিনিয়োগ করতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। তা ছাড়া গুজবের ভিত্তিতে অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায়দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। ডিএসই-সিএসই-এসইসি বা সরকারকে দোষারোপ করে কোনো লাভ হবে না। কারণ আপনার টাকার প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক আপনি নিজেই।
শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। এতে বক্তব্য দেন ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী এবং সিএসইর সভাপতি ফখরউদ্দীন আলী আহমেদ। এ সময় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শাকিল রিজভী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ জন্য বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে, সেগুলোর ৫১ শতাংশ সরকারের মালিকানায় রেখে বাকিগুলো বাজারে ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। এতে সরকার একদিকে প্রচুর টাকা পাবে, অন্যদিকে বাজারে স্থিতিশীলতাও আসবে। এখনই এটা করতে না পারলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ডিএসই-সিএসই যা সামাল দিতে পারবে না।
শাকিল রিজভী বলেন, প্রয়োজনে অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতের নতুন কোম্পানি গঠন করে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে সরকার। এর মাধ্যমে সরকার দেশের বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে শেয়ার-সংকটের সুযোগ নিয়ে যাতে কোনো খারাপ কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে না পারে, সেদিকেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
শাকিল রিজভী বলেন, ১৯৯৬ সালে শেয়ার-সংকটের সুযোগে বাজারে অনেক বাজে কোম্পানি ঢুকে পড়েছিল। যার বেশির ভাগই এখন দুর্বল মৌলভিত্তির ‘জেড’ শ্রেণীতে চলে গেছে। এসব কোম্পানিকে বাজারে আনতে যেসব ইস্যু ব্যবস্থাপকের ভূমিকা ছিল, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
ফখরউদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, যেসব শেয়ারের মৌলভিত্তি ও লভ্যাংশ দেওয়ার নজির ভালো নয়, বিনিয়োগকারীরা সেদিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। এ ধরনের বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ-ঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীদের বলতে চাই, আপনারা ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বা নিজের অন্য কোনো সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগ করবেন না।’
ফখরউদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষাকৃত পুরোনো বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। অনেক সময় তাঁরা এমন লোকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন, যিনি নিজেই লোকসানে রয়েছেন। পেশাজীবী পরামর্শকের অনুমোদন না থাকায় বিনিয়োগকারীরা এভাবে যারতার পরামর্শ নিয়ে ঠকছেন। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত, পেশাজীবী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া।
ফখরউদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, বারবার ঘোষণা দেওয়ার পরও অজানা কারণে ২৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এখনো বাজারে আসছে না। কাদের স্বার্থ সংরক্ষণে এসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া হচ্ছে না, তা-ও খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাজারে সূচক বৃদ্ধি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো খুব একটা চিন্তিত নয়। ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার ফলে সূচক বাড়লে তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শেয়ারের মূল্য আয়ের অনুপাত (পিই রেশিও)। বর্তমানে বাজারে তালিকাভুক্ত এমন অনেক খাত রয়েছে, যেগুলোর পিই রেশিও ৭০ থেকে ৮০-এর ওপরে। কখনোই এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম এ অবস্থায় স্থায়ী হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বর্তমান বাজারে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা খুবই দরকার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) যেভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলা হয়েছে, তার সঙ্গে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ একমত নয়। এসইসিকে এভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া উচিত হয়নি। এসইসির কর্মকাণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে তাতে পুঁজিবাজার সর্বোপরি দেশের অর্থনীতি, বিনিয়োগকারী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শাকিল রিজভী বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে যতই মর্যাদার জায়গায় রাখা যাবে, ততই বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
ফখরউদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, এসইসিকে শক্তিশালী করতে লোকবল বাড়ানো দরকার। এ জন্য সরকারকে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি বাজারের লেনদেনকে সহজ করতে আইনি কাঠামোর পরিবর্তন ও বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া মূলধন বাড়ানোর নামে প্লেসমেন্ট-বাণিজ্যেরও সমালোচনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-10-10/news/100254
Showing posts with label পুঁজিবাজার. Show all posts
Showing posts with label পুঁজিবাজার. Show all posts
Sunday, 10 October 2010
Saturday, 9 October 2010
এসইসির সব পদক্ষেপই ব্যর্থ: ঝুঁকিতে বিনিয়োগকারীরা
এসইসির সব পদক্ষেপই ব্যর্থ: ঝুঁকিতে বিনিয়োগকারীরা আলতাফ মাসুদ, ৯ অক্টোবর (শীর্ষ নিউজ ডটকম): সংকুচিত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। এসইসির নেয়া পদক্ষেপ কার্যকর না হওয়ায় বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের চাহিদার
তুলনায় শেয়ারের রবরাহ কম থাকায় তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শেয়ার হয়ে গেছে অতি মূল্যায়িত। ফলে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়ে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগের পরিধি আরো ছোট হয়ে এসেছে।
পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর তুলনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়েনি। বরং কমেছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ছিল ২৮৭টি (ট্রেজারি বন্ড বাদে)। ২০০৮ সালের একই সময় এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৮-তে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৩১১টি।
চলতি বছর বেশ কিছু কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত হয়। এছাড়া গত এক বছরে লোকসানি এবং উৎপাদনে না থাকা ৭৫টি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। এতে লেনদেন করা কোম্পানির সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়া আগামী ২০ অক্টোবর থেকে জেড ক্যাটাগরির আরো ৪টি কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তর করা হবে।
এদিকে এক বছরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২৬ লাখে পৌঁছেছে। এতে পুঁজিবাজার সংকুচিত হয়ে আসায় তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার অযৌক্তিক দরে লেনদেন হচ্ছে। শেয়ারের অতি মূল্যায়নের কারণে বাজারের সামগ্রিক পিই রেশিও অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির বিষয়ে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।
অপরদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমাতে এসইসির পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও আইনি জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। প্রকৃত সম্পদ বিবেচনায় মার্জিন ঋণ প্রদান ও ঋণ অযোগ্য কোম্পানির আর্থিক সমন্বয় সুবিধা (নেটিং সুবিধা) বন্ধে এসইসির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাইরে চলে গেছে। এ কারণে অধিকাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধির পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে লেনদেন। প্রায় প্রতিদিনই ডিএসইতে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত তিন বছরে কোম্পানির সংখ্যা না বাড়লেও লেনদেন বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি।
২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে ডিএসইর গড় লেনদেন ২২৯ কোটি টাকা হলেও গত সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ২৪৭২ কোটি টাকা। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মার্কেটের আকার অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে পারে। একদিকে শেয়ার সঙ্কটের কারণে অতি মূল্যায়ন অন্যদিকে অধিক বিনিয়োগকারী। সবমিলিয়ে অস্বাভাবিক লেনদেনের কারণে পুঁজিবাজার চলে যাচ্ছে বিপজ্জনক অবস্থায়। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশংকা রয়েছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
গত সপ্তাহে ডিএসইর অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরবৃদ্ধির সাথে বেড়েছে বাজার মূলধন। এক সপ্তাহে বাজার মূলধন ১৩ হাজার কোটি টাতা থেকে বেড়ে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত ৩ বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। এছাড়া গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেন, বাজার মূলধনের সাথে সব ধরনের সূচক, শেয়ার সংখ্যা ও হাওলাতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
তুলনায় শেয়ারের রবরাহ কম থাকায় তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শেয়ার হয়ে গেছে অতি মূল্যায়িত। ফলে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়ে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগের পরিধি আরো ছোট হয়ে এসেছে।
পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর তুলনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়েনি। বরং কমেছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ছিল ২৮৭টি (ট্রেজারি বন্ড বাদে)। ২০০৮ সালের একই সময় এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৮-তে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৩১১টি।
চলতি বছর বেশ কিছু কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত হয়। এছাড়া গত এক বছরে লোকসানি এবং উৎপাদনে না থাকা ৭৫টি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। এতে লেনদেন করা কোম্পানির সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়া আগামী ২০ অক্টোবর থেকে জেড ক্যাটাগরির আরো ৪টি কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তর করা হবে।
এদিকে এক বছরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২৬ লাখে পৌঁছেছে। এতে পুঁজিবাজার সংকুচিত হয়ে আসায় তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার অযৌক্তিক দরে লেনদেন হচ্ছে। শেয়ারের অতি মূল্যায়নের কারণে বাজারের সামগ্রিক পিই রেশিও অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির বিষয়ে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।
অপরদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমাতে এসইসির পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও আইনি জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। প্রকৃত সম্পদ বিবেচনায় মার্জিন ঋণ প্রদান ও ঋণ অযোগ্য কোম্পানির আর্থিক সমন্বয় সুবিধা (নেটিং সুবিধা) বন্ধে এসইসির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাইরে চলে গেছে। এ কারণে অধিকাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধির পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে লেনদেন। প্রায় প্রতিদিনই ডিএসইতে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত তিন বছরে কোম্পানির সংখ্যা না বাড়লেও লেনদেন বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি।
২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে ডিএসইর গড় লেনদেন ২২৯ কোটি টাকা হলেও গত সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ২৪৭২ কোটি টাকা। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মার্কেটের আকার অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে পারে। একদিকে শেয়ার সঙ্কটের কারণে অতি মূল্যায়ন অন্যদিকে অধিক বিনিয়োগকারী। সবমিলিয়ে অস্বাভাবিক লেনদেনের কারণে পুঁজিবাজার চলে যাচ্ছে বিপজ্জনক অবস্থায়। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশংকা রয়েছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
গত সপ্তাহে ডিএসইর অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরবৃদ্ধির সাথে বেড়েছে বাজার মূলধন। এক সপ্তাহে বাজার মূলধন ১৩ হাজার কোটি টাতা থেকে বেড়ে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত ৩ বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। এছাড়া গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেন, বাজার মূলধনের সাথে সব ধরনের সূচক, শেয়ার সংখ্যা ও হাওলাতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
Saturday, 2 October 2010
ডিমেট না করায় ২৫ কোম্পানি তালিকাচ্যুত
এসএম গোলাম সামদানী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি
ঢাকা: আবারো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে ২৫টি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিমনের (এসইসি) বেঁধে দেওয়া সময় ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাগজের শেয়ার থেকে ডিমেট প্রক্রিয়ায় আসতে না পারায় বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে এসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হয়। এসইসি বলছে, এখন এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন মূল মার্কেটে বন্ধ থাকবে। লেনদেন হবে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে।
অন্যদিকে, ওটিসি মার্কেটে বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা না থাকার কারণে গত এক বছরে সেখানে কোনো ধরনের লেনদেন হচ্ছে না বলেই চলে। এর আগে ওটিসিতে পাঠানো ৫০টি কোম্পানির কাছে বিনিয়োগকারীদের কয়েক হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা একই পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে নতুন তালিকাচ্যুত এই ২৫ কোম্পানির হাজার কোটি টাকার শেয়ার। অবশ্য তালিকাচ্যুত এই কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন ১৯৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে ডিএসইর সভাপতি মো. শাকিল বিজভী বাংলানিউজকে বলেন, ‘তালিকাচ্যুত ২৫ কোম্পানিকে কাগজের শেয়ার থেকে ডিমেট করার জন্য এসইসি কোম্পানিগুলোকে বারবার সময় দেওয়ার পরও তারা ডিমেট করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ডিএসই এসব কোম্পানিকে এসইসি নির্দেশে তালিকাচ্যুত করেছে। এখন এসব কোম্পানির শেয়ার ওটিসি মার্কেটে লেনদেন হবে।’
ডিমেট করলে আবারো মূল মার্কেটে তাদের ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এসইসির সদস্য মো. ইয়াসিন আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘কমিশন বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সকল কাগজের শেয়ারকে ডিমেট শেয়ারে রুপান্তরিত করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু এসব কোম্পানি তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এদেরকে মূল মার্কেট থেকে বের করে ওটিসিতে পাঠানোর পূর্ব সিদ্ধান্ত কমিশন বহাল রেখেছে।’
অবশ্য বিনিয়োগকারীরা বলছেন, তালিকাচ্যুত না করে এসব কোম্পানিকে এসইসি শাস্তি দিতে পারতো।
মো. বেলাল হোসেন নামের একজন বিনিয়োগকারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘অলটেক্স ইন্ডাট্রিজকে তালিকাচ্যুত করার কারণে আমার বিনিয়োগকৃত প্রায় ২ লাখ টাকা আটকে গেছে।’
তালিকাচ্যুত ২৫ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে খাদ্য ও অনুষঙ্গিক খাতের ৯টি কোম্পানি, টেক্সটাইল খাতের ৪টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩টি, বিবিধ খাতের ২টি, সেবা খাতের ২টি। এছাড়াও ট্যানারি, প্রকৌশল, কাগজ, সিমেন্ট ও পাট খাতের ১টি কোম্পানি রয়েছে।
খাদ্য ও অনুষঙ্গিক খাতের ৯টি কোম্পানি হলো- আলফা টোবাক্কো, বাংলাদেশ লিফ টোবাক্কো কোম্পানি (বিএলটিসি), ইউসুফ ফ্যাওয়ার, বাংলাদেশ প্লান্টেশন, হিল প্ল্যান্টেশন, গালফ ফুড, জিলবাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগার, মর্ডান ইন্ডস্ট্রিজ।
টেক্সটাইল খাতের ৪টি কোম্পানি হলো- মর্ডান ডাইং, আনলিমা ইয়ার্ন, অলটেক্স ইন্ডাসট্রিজ, কাসেম সিল্ক, রসায়ন খাতের বাংলা প্রসেস, ওরিয়ন ইনফিউশন্স, থিরাপেটিকস, বিবিধ খাতের হিমাদ্রি, দি ইঞ্জিনিয়ার্স।
সেবা খাতের ২টি কোম্পানি হলো- বাংলাদেশ সার্ভিসেস ও বাংলাদেশ হোটেলস। এছাড়া ট্যানারি খাতের সমতা লেদার, প্রকৌশল খাতের রেনউইক জজ্ঞেশ্বর, কাগজ খাতের আজাদী প্রিন্টার্স, সিমেন্ট খাতের নিলয় সিমেন্ট, পাট খাতের নর্দান জুট।
গত ২৫ মে এসইসি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কাগজের শেয়ার ১ জুলাইয়ের মধ্যে ডিমেটে শেয়ারে রূপান্তরের নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশে বলা হয়, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানি কাগজের শেয়ার থেকে ডিমেট শেয়ারে রূপান্তর করতে ব্যর্থ হলে তাদেরকে ১ জুলাই থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হবে। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়ার পরও ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওইসব কোম্পানিকে মূল মার্কেটে লেনদেনের সুয়োগ দেওয়া হবে। এরপরও যদি তারা ডিমেট না করে তাহলে ১ অক্টোবর থেকে ওইসব শেয়ারকে মূল বাজারে লেনদেন করতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১০
Subscribe to:
Posts (Atom)