Saturday 9 October 2010

এসইসির সব পদক্ষেপই ব্যর্থ: ঝুঁকিতে বিনিয়োগকারীরা

এসইসির সব পদক্ষেপই ব্যর্থ: ঝুঁকিতে বিনিয়োগকারীরা আলতাফ মাসুদ, ৯ অক্টোবর (শীর্ষ নিউজ ডটকম): সংকুচিত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। এসইসির নেয়া পদক্ষেপ কার্যকর না হওয়ায় বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের চাহিদার
তুলনায় শেয়ারের রবরাহ কম থাকায় তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শেয়ার হয়ে গেছে অতি মূল্যায়িত। ফলে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়ে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগের পরিধি আরো ছোট হয়ে এসেছে।
পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর তুলনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়েনি। বরং কমেছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ছিল ২৮৭টি (ট্রেজারি বন্ড বাদে)। ২০০৮ সালের একই সময় এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৮-তে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৩১১টি।
চলতি বছর বেশ কিছু কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত হয়। এছাড়া গত এক বছরে লোকসানি এবং উৎপাদনে না থাকা ৭৫টি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। এতে লেনদেন করা কোম্পানির সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়া আগামী ২০ অক্টোবর থেকে জেড ক্যাটাগরির আরো ৪টি কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তর করা হবে।
এদিকে এক বছরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২৬ লাখে পৌঁছেছে। এতে পুঁজিবাজার সংকুচিত হয়ে আসায় তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার অযৌক্তিক দরে লেনদেন হচ্ছে। শেয়ারের অতি মূল্যায়নের কারণে বাজারের সামগ্রিক পিই রেশিও অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির বিষয়ে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।    
অপরদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমাতে এসইসির পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও আইনি জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। প্রকৃত সম্পদ বিবেচনায় মার্জিন ঋণ প্রদান ও ঋণ অযোগ্য কোম্পানির আর্থিক সমন্বয় সুবিধা (নেটিং সুবিধা) বন্ধে এসইসির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাইরে চলে গেছে। এ কারণে অধিকাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধির পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে লেনদেন। প্রায় প্রতিদিনই ডিএসইতে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত তিন বছরে কোম্পানির সংখ্যা না বাড়লেও লেনদেন বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি।
২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে ডিএসইর গড় লেনদেন ২২৯ কোটি টাকা হলেও গত সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ২৪৭২ কোটি টাকা। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মার্কেটের আকার অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে পারে। একদিকে শেয়ার সঙ্কটের কারণে অতি মূল্যায়ন অন্যদিকে অধিক বিনিয়োগকারী। সবমিলিয়ে অস্বাভাবিক লেনদেনের কারণে পুঁজিবাজার চলে যাচ্ছে বিপজ্জনক অবস্থায়। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশংকা রয়েছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন।       
গত সপ্তাহে ডিএসইর অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরবৃদ্ধির সাথে বেড়েছে বাজার মূলধন। এক সপ্তাহে বাজার মূলধন ১৩ হাজার কোটি টাতা থেকে বেড়ে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত ৩ বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। এছাড়া গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেন, বাজার মূলধনের সাথে সব ধরনের সূচক, শেয়ার সংখ্যা ও হাওলাতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।